বিজ্ঞাপন

এই সমান অধিকার মেনে নিয়েছি!

রিকশা চালাতে হবে — নবম শ্রেণীতে পড়া ছেলেটার পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়া দেখে কিছুটা ঠাট্টার ছলে হলেও ছেলেকে মনোযোগী করার জন্যে আমাদের সমাজে এটি অতিপরিচিত শাসন মূলকথা। আর ৯ম শ্রেণীর একটি মেয়ে যখন একইভাবে অমনোযোগী, শাসন মূলক বাক্যটি হয়ে ওঠে— ‘বিয়ে দিয়ে দেব’। একটি ছেলের বেলায় অমনোযোগী হওয়া প্রশ্নের উত্তর যখন একটি কর্মসংস্থান অর্থাৎ আরও একটি শুরুর পথ; ঠিক তখন একটি মেয়ের বেলায় সমাধানটা হচ্ছে বিয়ে; এবং সাথে একটি স্বাধীন জীবন নামক গল্পের সমাপ্তি।

এই সমান অধিকার মেনে নিয়েছি!

প্রতিটি মেয়ে কিশোরী নামটা পেরোতে না পেরোতেই বিয়ে তার জন্যে অতি জরুরী হয়ে ওঠে; সমাজ পরিস্থিতি তাকে পরিবারের কাছে বোঁঝায় রূপান্তর করে, যখন কিনা সমাজে একটি ছেলের বিয়ের কথা ভাবাটাও বিরল। হাস্যকর হলেও সত্যি সময়ের দাবিতে দারিদ্র্যতা যখন সমাজের নিকটাত্মীয় কিছুটা অলৌকিক শুনালেও দারিদ্র্য মুক্ত হওয়ার এক বিদঘুটে উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা কিশোরী মেয়েটার বিয়ে।

ঠিক একই পরিস্থিতিতে সমাজ ছেলেকে শেখাচ্ছে দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করতে, পথ দেখানো হচ্ছে পড়াশোনার মাধ্যমে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। সমস্যা, পরিস্থিতি, সবই যখন এক তখন সমাজ ছেলে ও মেয়েদের সমাজ সমাধান দিচ্ছে ভিন্ন।শিক্ষিত হওয়ার সুফল মাথায় নিয়েও ভুলে যাচ্ছে সবাই বিয়ে কখনো একটি মেয়ের জীবনের সমাধান হতে পারেনা। অতঃপর এখানেও নেই সমান অধিকার।

প্রতিনিয়ত, নারী পুরুষের সমান অধিকারের দাবিদার দাবি করে যাচ্ছি নিজেদের, ঠিক তারই সাথে উপরের উক্ত অনাধিকারের উদাহরণগুলো নিজেদের অসাবধানতাই ঘটে যাচ্ছে নিত্যই, আমাদের অনাধিকারের মনোভাব তো রয়ে গেছে। তবুও আমরা চিৎকার বলে যাচ্ছি সমান অধিকারের কথা। নিজেদের পরিবারেই যখন অনিচ্ছুক ভাবে আমার রোজ নারী পুরুষের ব্যবধানের শত উদাহরণ রাখছি তখন আমরা কি আশা করছি.!

শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ে বারবার ওই মহাসত্য, চিরচেনা, অকার্যকর বাক্যটি (‘নারী—পুরুষ সমান অধিকার’) পড়লেই সমাজে নারী পুরুষের অধিকার সমান হয়ে যায় না। সমান অধিকার তো সেদিন হবে, যেদিন অটো রিকশাতে ৪টি ছেলে বসা দেখেও বিন্দুমাত্র ভয় ছাড়াই স্কুল শেষে মেয়েটি অটো করে বাড়ি ফিরতে পারবে। সমান অধিকার তো সেদিন হবে, যেদিন কিশোরী মেয়েটা সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরও তার মায়ের মনে কোন ভয় থাকবে না। সমান অধিকার তো সেদিন হবে, যেদিন মেয়েটাকে রাতে অফিস করতে হবে শুনে প্রতিবেশী সমাজের গোপন আলোচনার কারন হয়ে ওঠবে না। ছোট্ট এই জীবনে এখন অবধি এই সমাজে সমান অধিকারের সম্মুখীন হতে পারিনি বলে নিজেকে বড্ড বেশিই দুর্ভাগা মনে হয়। তবে হ্যাঁ, অনেক অধিকারওয়ালা দিবস দেখেছি, অনেক র‌্যালী করেছি তারপর সমাজের সবার মতো আমিও এই সমান অধিকার মেনে নিয়েছি!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মেয়ে পরীক্ষার হলে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু