বিজ্ঞাপন

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে?

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সকাল ৯টা, রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর)দের দরবার হলে শুরু হয় দরবার। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিডিআরের কিছু বিদ্রোহী সদস্যরা দরবার হলে অতর্কিত হামলা শুরু করে!

ভিডিওতে দেখুন 

বিদ্রোহী সদস্যদের সেদিনের হামলায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন। আপনি একটি তথ্য জানলে অবাক হবেন যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও সব মিলিয়ে ৫১ জন সেনা অফিসার শহীদ হয়েছিলেন। 

কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এক বিডিআর বিদ্রোহতে মৃত্যু বরণ করে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা। ঘটনার এতো বছর পরে এসেও কি জনমনে মনে প্রশ্ন জাগেনি-

১) কি জন্য হয়েছিল এ বিদ্রোহ? 
২) কি জন্য বাংলাদেশ সরকার কিংবা সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে সেনা পাঠালো না?
৩) বিডিআর বিদ্রোহে ভারতের ভূমিকা কি ছিল?
৪) আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার ভূমিকা-ই বা কি ছিল?  
৫) কেন এই হত্যা মামলার তদন্ত রিপোর্ট আজও জাতির সামনে উন্মোচন করা হয়নি?

ঢাকায়, ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তরে তিন দিনব্যাপী রাইফেলস সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনের বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল রাইফেলস সপ্তাহের।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পুরো বিডিআর এলাকায় একটি অতিরঞ্জিত খবর প্রচার হয়ে বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ নাকি বিডিআরদের ডাল ভাত কর্মসূচি থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রচারিত এই খবরের সত্য মিথ্যা যাচাই না করে বেশকিছু বিডিআর সদস্য এই বিদ্রোহো শুরু করেন।

বিদ্রোহের কারণ হিসেবে উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত হওয়ার পরেও বিডিআররা বেশ কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর থেকে কম সুযোগ সুবিধা পেত, তার মধ্যে জাতিসংঘ মিশনে যাওয়ার সুযোগ না থাকা, রেশন-বৈষম্য, ডাল-ভাত কর্মসূচির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগসহ নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।  সকাল ৯টা ৫মিনিট পিলখানা দরবারে হাজির হন বিডিআর এর তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ৯:৩০ এ বক্তব্য দেয়া শুরু করেন মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। এখানে বলে রাখা ভালো এই অনুষ্ঠানটি সকাল আটটায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। যাহোক, এসময়ে অস্ত্র হাতে মঞ্চে ওঠে সিপাহি মুঈন, মুইন কে ধরে ফেলে শাকিল আহমেদের আশেপাশে থাকা সেনা কর্মকর্তারা।

এবং সাথে সাথে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআরদের জাওয়ানরা পিলখানার দরবার হলের বাহিরে চলে যায়! এবং শুরু হয় এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি আর গোলাগুলি। শুরু হয় গেছে পিলখানার ভিতরে বিডিআর বিদ্রোহ।

অন্য দিকে দরবার হলের ভিতরে মেজর জেনারেলের শাকিল আহমেদ ও তার অনুগত সদস্যরা দরবারের ভিতরের পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করছে।

সকাল ৯টা ৩২ মিনিট মেজর জেনারেল সাকিল তাৎক্ষনিক ফোন দিয়ে জানান তৎকালীন সেনা প্রধান মইন উদ্দিন আহমেদকে পিলখানায় জরুরী সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেন। 

তারপর ফোন করেন র‍্যাবেরে ডিজিকে সেখানেও সাহায্য চান, ঠিক ৯টা ৩৮মিনিট জেনারেল সাকিল প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনাকে ফোন করে তার কাছেও সাহায্য চান তখনও অসংগঠিত বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা।

দরবার হলের ভিতরে কিং কর্তব্য বিমুঢ় হয়ে থাকেন মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ সহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা অন্য দিকে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকে সময় বাড়ার সাথে সাথে ১০টা ২০মিনিটেও সাকিল আহমেদ জানতে চায় কেউ কোন সহায্য পাঠিয়েছে কিনা? কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।

অন্য দিকে ১০টা ৪০মিনিটে অস্র হাতে দরবার হলের ভিতরে ডুকতে থাকে খুনিরা তাড়া গালগালি করতে থাকে সেনা অফিসারদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে থাকে এমনকি অফিসারদের ব্যাচ খুলে নিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন আদেশ দিতে থাকে। ১০টা ৪২মিনিটে খুনিরা একদম কাছথেকে মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ও তার অনুগত সেনা অফিসারদের গুলি করে হত্যা করে। এরই ধারাবাহিকতা শুরু হয় ভয়ংকর পিলখানা ট্রাজেডি।

কোন যুদ্ধ নয়, কোন দুর্গম পাহাড়ি এলাকাও নয় সয়ং রাজধানীতে দিনের আলোতে প্রকাশ্য দিবালোকে একের পর এক করনেল মেজর জেনারেল বিগ্রেডিয়ারসহ বড়ো বড়ো সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজধানীর পিলখানা এলাকা। বিদ্রোহিদের কেউ কেউ তখন মিডিয়ার সামনে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে থাকে।

যদিও বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচুর গুজবের জন্ম দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতীয় গণমাধ্যম 

ইতোমধ্যে, খুনিদের হাত থেকে নিজেদের সহকর্মীদের উদ্ধর করতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে পিলখানার সামনে সকাল ১০টায় পৌঁছে যায় পাঁচ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা।

পৌঁছে যায় র‍্যাব সদস্যরাও আকাশ পথে বিমান ও হেলিকপ্টার পৌঁছে যায় আটকে পড়া সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে বারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকলেও সেনাপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী থেকে তাদের কোন প্রকার অভিযান চালানো অনুমতি দেওয়া হয়নি। 

কেন তাদের পাল্টা হামলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি সেই রহস্য আজও অজানা। এখন জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে কি সেই রহস্য। 

এই রহস্য সম্পর্কে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বক্তব্য এবং ভারতের বিখ্যাত লেখক আবিনাশ পালিওয়ালের লেখা বই India’s Near East বইতে দেওয়া আছে। 

সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ জানিয়েছেন ঐদিন বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি দেখতে পান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের সাথে হাসিমুখের চায়ের আড্ডা দিচ্ছেন। 

অন্যদিকে আবিনাশ পালিওয়ালের বই থেকে দেখা যায় তৎকালীন সেনাপ্রধানকে ভারত হুমকি দিয়েছিলেন যাতে তারা বিডিআর বিদ্রোহে কোন প্রকার সেনা অভিযান না চালায়। এতে করে শেখ হাসিনার টিকে থাকা হুমকির মুখে পরতে পারে। এমনকি এই বিদ্রোহ অন্য দিকে মোর নিলে হাসিনাকে উদ্ধারের জন্য প্যারা টুপার প্রস্তুত রেখেছিলেন ভারত। 

এই বইতে আরো উল্লেখ আছে ভারতের কলাইকুন্ডার পাশাপাশি জয়হাট ও আগরতলায় প্যারা টুপার প্রস্তুত রেখেছিলেন ভারত, নির্দেশ পেলেই তিন দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো তারা। উদ্দেশ্য ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেজগাও এয়ারপোর্ট দখলে নেওয়া)। 

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাসিনাকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নেওয়া হতো। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনারা নেত্র নিউজ এর আর্টিকেলটি দেখতে পারেন। 

মূলত, ভারতের এই হুমকির জন্যই জেনারেল মইন উ আহমেদ অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেছিলেন বলা যায়। এবং ভিতরে অবস্থিত সেনা অফিসারদের উত্তরের জন্য কোন প্রকার সেনা অভিযান চালাননি। তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যেতে পারতো। 

অন্যদিকে বেলা ১১টায় শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা মিলে বিদ্রোহীদের সাথে আলাপ-আলোচনা হয়, বেলা ১টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আজমকে পাঠনো হয় বিদ্রোহীদের সাথে কথা বলার জন্য। বেলা ৩টার দিকে অফিসার তাওহীদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বিদ্রোহী দলের সাথে আলোচনা শুরু হয় এবং হোটেল শেরাটন থেকে বিদ্রোহীদের জন্য খাবার আনা হয়। 

সিদ্ধান্ত হয় তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এবং বিডিআর এর সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে। অথচ আওয়ামী লীগ প্রধান এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবারও জানতে চাননি ভিতরে আটকে পরা সেনা অফিসারদের কি খবর? তাদের পরিস্থিতি কি এখন? ওই রাতে পিলখানায় গিয়েছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ তারা কিছু বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে আসলেও ভিতরের সেনা অফিসারদের পরিবারকে উদ্ধার করার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। 

তার বিপরীতে কথিত আছে ওই রাতে নানক, তাপস ও আজমের সহযোগিতায় বেশ কিছু খুনি বিডিআর সদস্য পিলখানা থেকে দূরে সরে যায়। এই কথাটা আদৌ সত্য নাকি বানোট সে বিষয় আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহীরা নিরাপদ দূরত্বে চলে, এর পর পিলখানার ভেতর থেকে একের পর এক ঘন কবরের সন্ধান মিলতে থাকে। কোন কোন সেনা অফিসারদের মরদেহ পড়ে থাকে নর্দমার ভিতরে। 

এসব সেনার সদস্যের স্বজনদের কান্নায় বাঢ়ি হয়ে যায় বাংলার আকাশ বাতাস। এর ঠিক কিছুদিন পর বিক্ষিপ্ত সেনা অফিসারদের সামাল দিতে ক্যান্টনমেন্টে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সেখানে উপস্থিত সকল সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন প্রশ্নের জর্জরিত করেছিল। কেন শেখ হাসিনা পিলখানায় আটক সেনা অফিসারদের উদ্ধার করতে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রশ্নের উত্তর তো দূরের কথা তার বিপরীতে কয়েকদিনের মধ্যেই তাদেরকে চাকরিচুত্ত করা হয়। এমনকি কাউকে তো গ্রেপ্তারও করা হয়। 

অন্যদিকে নানা শর্তসাপেক্ষের মধ্য দিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য গঠিত হয় তিনটি তদন্ত কমিটি লেফটেন্যান্ট জাহাঙ্গীর আলমের অধীনে সামরিক তদন্ত কমিটি আনিস উজ জামানের নেতৃত্বে বেসামরিক তদন্ত কমিটি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই দুই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও জাতির সামনে উন্মোচন করা হয়নি। 

কি কারনে এই তদন্ত রিপোর্ট উন্মোচন করা হয়নি তা আজও রহস্য! অন্যদিকে আওয়ামী পক্ষের এসপি বলে পরিচিত আব্দুল কাহার আকন্দের অধীনেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এখানে একটি মজার বিষয় বলি কাহার আকন্দই আওয়ামী পক্ষের সকল গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করে থাকে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, শেখ মুজিব হত্যাকান্ড ও পিলখানা বিদ্রোহ এই সকল বিষয়ে তদন্ত করেছিল এই কাহার আকন্দ সাহেব। 

কাহার আকন্দ যথারীতি তার সমস্ত তদন্ত রিপোর্টেই বিএনপির সহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের উপর এর দায় চাপিয়ে দিয়ে ছিলেন। 

• বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে জনমনে আছে হাজারো প্রশ্ন? 
 কেন মেজর জেনারেল শাকিল এর অনুরোধের পরেও কোন প্রকার সামরিক উদ্ধার অভিযান করা হয়নি? 
• কেন এই ঘটনার পরিপূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য বিচার হয়নি? 
• কেন এই বিদ্রোহের তদন্ত রিপোর্ট আজও উন্মোচন করা হয়নি? 

আশা করি স্বাধীন বাংলাদেশের আমাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর পাবো এই আশা রেখে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মেয়ে পরীক্ষার হলে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু