বিজ্ঞাপন

ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, কি আছে ধর্মগ্রন্থে?

ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ এর ব্যাখ্যানুযায়ী, কেয়ামতের আগে তাদের ত্রাণকর্তার আগমন ঘটবে। তারা তাকে বলে মাসিহ। ইসলামে এই মাসিহ হলো দাজ্জাল, যে কিনা গোটা বিশ্ব শাসনব্যবস্থার একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। তাদের মাসিহের আবির্ভাবের তিনটি প্রধান শর্ত রয়েছে। 

ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, কি আছে ধর্মগ্রন্থে?
ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, কি আছে ধর্মগ্রন্থে?

  • . সারা বিশ্বের ইহুদিদের ইসরাইলে জড়ো হতে হবে।
  • ২. একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 
  • ৩. সোলাইমানি মন্দির আগে যেখানে ছিল, ঠিক সেখানেই সেই মন্দির তৈরি করতে হবে, যাকে তারা বলে ‘থার্ড টেম্পল’।

প্রথম দুটি শর্ত পূরণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইহুদিরা। অর্থাৎ তারা ইসরাইলে জড়ো হয়েছে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রও গঠন করেছে। এখন বাকি আছে তৃতীয় শর্ত। সেই শর্ত পূরণ করতে হলে আল-আকসা মসজিদ ভাঙতে হবে আর সেখানেই সোলাইমানি মন্দির বা থার্ড টেম্পল গড়তে হবে।

আর এটি করার জন্য তাদের পবিত্র হতে হবে। পবিত্র হওয়ার জন্য প্রয়োজন লাল গাভী। তাদের ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যমতে, লাল গাভী তিন বছর বয়সে উপনীত হলে তারা সেটিকে জবাই করে রক্ত ও আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র হবে।

বহু খোঁজাখুঁজির পর সেই আকাঙ্ক্ষিত লাল গাভীর সন্ধান তারা পেয়ে গেছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোনেহ ইসরায়েল নামের একটি ইহুদি সংগঠন গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচটি লাল গরু আমদানি করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র হাইম বারকোভিতস বলেছেন, আল-আকসা মসজিদের অদূরেই জাবাল উজ জয়তুন বা মাউন্ট অলিভ এলাকায় একটি খামারে গরুগুলোকে রাখা হয়েছে।
ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, কি আছে ধর্মগ্রন্থে?
ইহুদিদের লাল গরু
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো- থার্ড টেম্পল করার জন্য পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা তাদের চূড়ান্ত। ইসরায়েলের কট্টর ইহুদিদের একাধিক গোষ্ঠী বহু বছর ধরে আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেই জায়গায় ‘থার্ড টেম্পল’ (তৃতীয় মন্দির তথা সোলাইমানি মন্দির) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী যে সংগঠন এই কাজে দাঁড়িয়ে গেছে, সেটির নাম টেম্পল ইনস্টিটিউট। আরেক সংগঠনের নাম ‘বোনেহ ইসরায়েল’। এতে ইহুদি ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা একজোট হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রিটার্নিং টু দ্য মাউন্ট’। 

প্রস্তাবিত থার্ড টেম্পল নির্মাণের মিশনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে টেম্পল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান মন্দিরটি নির্মাণের জন্য অনেক আগে থেকেই সাজসরঞ্জাম প্রস্তুত করছে। মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় পুরোহিতেরা যেসব পোশাক পরবে, তা আগেভাগেই তারা বানিয়ে রেখেছে। তাওরাতের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্দিরের জন্য তামার জলপাত্র (কপার লিভার), ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো ৪৫ কেজি ওজনের আলোকদানিসহ (গোল্ডেন ম্যানোরাহ) নানা ধরনের আসবাব তারা তৈরি করে রেখেছে। টেম্পল ইনস্টিটিউটের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেরুজালেরেমের ওল্ড সিটির ইহুদি মহল্লার সেন্ট্রাল প্লাজায় এসব সংরক্ষিত আছে।
সোনা দিয়ে বানানো ৪৫ কেজি ওজনের আলোকদানি

থার্ড টেম্পল কী?
জেরুজালেমের আজকের আল-আকসা মসজিদ যেখানে অবস্থিত, ঠিক এখানেই নবী সোলাইমান (আ.) মসজিদটি বানিয়েছিলেন। নবী সোলাইমান (আ.) ইহুদিদের কাছে কিং সলোমন বলে পরিচিত। ইহুদিরা যেহেতু ইসরায়েলের (ইয়াকুব নবীর; বাইবেলের ভাষায় জ্যাকব) এর বংশধর; সেহেতু সোলাইমান (আ.) বা কিং সলোমন ইহুদিদের কাছে পবিত্র পুরুষ। সোলাইমানের বানানো এই মসজিদ বা উপাসনালয়ই হলো ইহুদিদের ‘ফার্স্ট টেম্পল’। 

৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইরাকের ব্যাবিলনের শাসক বখতে নাছর (পশ্চিমা বিশ্বে যিনি ব্যাবিলনের সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার নামে পরিচিত) হামলা চালিয়ে এই ফার্স্ট টেম্পল গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সব বনি ইসরায়েল বা সব ইহুদিকে দাস হিসেবে বন্দী করে ইরাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর পারস্য শাসকেরা বখতে নাছরের সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে বনি ইসরায়েল তথা ইহুদিদের ইরাক থেকে মুক্ত করে আবার ফিলিস্তিনে নিয়ে আসেন। ধ্বংস করে ফেলা সোলাইমানের মসজিদ বা ফার্স্ট টেম্পলের ওপর ৫১৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আবার আরেকটি উপাসনালয় নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়। এটিকে বলা হয় ‘সেকেন্ড টেম্পল’। 

পরে রোমানরা পারস্যদের পরাজিত করে বাইতুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেম দখল করে এবং ৭০ খ্রিষ্টাব্দে তারা সেকেন্ড টেম্পলও ধ্বংস করে ফেলে। বর্তমানে আল আকসা বলতে পুরো কম্পাউন্ডকে বোঝানো হয়। এই কম্পাউন্ডের চার দেয়ালের মধ্যে থাকা কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ—এই তিন মসজিদের সমন্বয়ই হলো আল আকসা। মূল আল আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার প্লেট দিয়ে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা স্থাপনাটি। তবে মিডিয়ায় আল আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালী গম্বুজের স্থাপনার নাম কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক। ইহুদিদের মূল লক্ষ্যস্থল হলো এই ডোম অব দ্য রক যেটিকে তারা টেম্পল মাউন্ট বলে। তারা এর হিব্রু নাম দিয়েছে, ‘হার হাবাইত’। এই টেম্পল মাউন্টের স্থলেই আদি সোলাইমানি মন্দিরের নকশায় থার্ড টেম্পল বানানোর পরিকল্পনা আছে ইহুদি কট্টরপন্থীদের।

থার্ড টেম্পলের একটি মডেল

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গরুর কথা

গরুর সাথে ইহুদি জাতির সম্পর্ক নতুন নয়, এটা খুব পুরানো। হযরত মুসা (আ.) এর জাতির গরু প্রীতি নিয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যখন মুসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে  উপহাস করছ?

মুসা (আ.) বললেন, মুর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয়  প্রার্থনা করছি। তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়- বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি  বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রং কিরূপ হবে? মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী- যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে। তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন- তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ?

কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়- হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা  জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না। (সুরা বাকারা: ৬৭-৭১)

বাইবেলে বর্ণিত গরুর ধরণের সাথে কোরআনে বর্ণিত গরুর বেশ কিছু মিল আছে, যেমন, গাভী হতে হবে, মাঝারী বয়সের হতে হবে, কোনো চাষাবাদ বা অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়নি এমন হতে হবে, নিখুঁত ও কলঙ্ক বিহীন হতে হবে, তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে, ‘হাইকলের জমি আমাদের হাতে আসা মাত্রই আল্লাহ লাল গাভীকে আদেশ করবেন, সে হাম্বা ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে তারপর আমরা শুরু করবো হাইকল নির্মাণ। বনী ইসরাইলের নবীগণ এই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন’ (আখবারুশ-শারক ১৩/০৫/১৯৯৭)

লাল গরু সম্পর্কে তাওরাতে যা আছে
তাওরাতের গণনা পুস্তকের ১৯ অনুচ্ছেদের ১ থেকে ১৭ তম শ্লোকে গাভিটির বৈশিষ্ট্য ও শুদ্ধিকরণ পানি প্রস্তুতের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। সেখানে বলা আছে: ‘সদাপ্রভু মোসেজ (মুসা আ.) ও হারোনকে (মুসা আ.-এর ভাই হারুন আ.) বললেন, ‘এটি একটি বিধি যেটি অনুযায়ী আমি আদেশ করছি: ইসরায়েলের সন্তানদের (বনী ইসরায়েলদের) বলে দাও, তারা যেন গায়ে কোনো খুঁত নেই এবং কাঁধে জোয়াল টানেনি এমন একটি লাল গরু নিয়ে আসে।

তোমরা এলিয়েজার যাজককে (ইসলামে যিনি ইলিয়াস আ.) সেই গরু দেবে তারপর গরুটাকে শিবিরের বাইরে নিয়ে যাবে এবং এলিয়েজারের সামনে সেটিকে বলি দেবে। এরপর এলিয়েজার যাজক সেই বলি দেওয়া গরুর রক্ত আঙুলে মাখিয়ে তা শিবিরে জড়ো হওয়া সবার সামনে সাত বার ছিটিয়ে দেবে। তার সামনেই সেই বলি দেওয়া গরু পোড়ানো হবে; সেটির গোবরসহ চামড়া, মাংস ও রক্ত পোড়ানো হবে। যাজক তখন দারুবৃক্ষ, হাইসোপ (এক ধরনের তৃণবিশেষ) পুড়তে থাকা গরুর ওপর ফেলে দেবে। তখন যাজক তার পোশাক ধোবে ও শরীর জলে ধোবে। পরে শিবিরে ঢুকতে পারবে যদিও যাজক সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি থাকবে।’ (তাওরাত, অনুচ্ছেদ ১৯, শ্লোক ২-৮)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মেয়ে পরীক্ষার হলে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু