বিজ্ঞাপন

কালো গেঞ্জি গায়ে পুলিশের সামনে আবু সাঈদ

ছবিঃ আবু সাঈদ

কালো গেঞ্জি গায়ে পুলিশের সামনে বুক টান করে দাঁড়ায়, আবু সাঈদ। পুলিশ তাকে রক্ষা করার বদলে গুলি করে। ঠাস ঠুস কয়েকটা গুলির মধ্যে একটা গুলি লাগে তার কোমড়ে খানিকটা বাজ হয়ে যায় শরীর। সম্ভবত সে বুঝতে পারে নাই গাড় ঘুরিয়ে কোমড় দেখার চেষ্টা করে একবার। তারপর আবার আগের মতো আবার দুই হাত প্রসারিত করে সিনা টান করে দাঁড়ায়। ডান হাতে ছোট্ট একটা লাঠি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশেই বেশ কয়েক জন পুলিশ হাতে রাইফেল, রাইফেলর তাজা গুলি আবারও গুলির শব্দ … … পরে গুলিটা কোথায় লাগলো বোঝা গেলো না তবে আবু সাঈদ টলছে পরবে পরবে ভাব কিন্তু সে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেস্টা করছে। 

গুলি খাওয়ার আগে ফেসবুকে তার শেষ পোস্ট ছিল যতো দিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। সেজন্যই হয়তো গুলি খাওয়ার পরও সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাই-ছিলো কিন্তু পারছিলনা। আবু সাঈদের মেরুদণ্ড সোজা থাকলেও শরীরটা ক্রমশ মাটির দিকে ঝুলে পরছিলো। সবুজ জামা পড়া বন্ধু এগিয়ে আশে পুলিশের গুলির ভয় ডর পাশে রেখে আবু সাঈদকে ধরে আরো দুএকজন আশে আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিতে হবে। আবু সাঈদ হাটতে পারছে না। 

শরীর ছেড়ে দিচ্ছে, চারপাঁচ জন হাতপা ধরে শূন্যে তুলে আবু সাঈদ ঝুলছে আর রক্ত পরছে। টপ.. টপ.. টহপ.. যে আবু সাঈদ কিছুক্ষণ আগেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেত্রিত্ব দিচ্ছিলো সে এখন শূন্যে ঝুলছে। যেভাবে ঝুলছে মেধাবীদের ভাগ্য। রাত ১০(দশটার) আগেই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল আবু সাঈদের। মা অপেক্ষা করছে, বোন অপেক্ষা করছে, বাবা অপেক্ষা করছে তখন তারা জানেনা আবু সাঈদের মৃত্যুর সার্টিফিকেট লিখছে কর্তব্যরত ডাক্তার। 

নাম: আবু সাঈদ
পিতা: মকবুল
ঠিকানা: বাবুলপুর, পিরগঞ্জ, রংপুর।

বয়স ২৫(পঁচিশ) মৃত্যু কারণ আগমনের সময়ই মৃত্যু, তারিখ ১৬/০৭/২০২৪ইং রাত ৮:০৫(আটটা পাঁচ) মিনিট, সিরিয়াল নাম্বার (২৪০৪৩৪) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ছেলেটা খুন হয়ে গেছে মা যখন জানলো দুনিয়া কি আর ঠিক আছে তার কাছে বিলাপ করে বলে আমার ছেলের চাকরি না দিবি না দে গুলি করলো কেন। বোন শুনে আর্তনাদ করে বলে তিনটে গুলি কেন আমারে করলো না! 

আবু সবাই ফেসবুকে আরো লিখে ছিলো যদি আজ শহীদ হই তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন, ছাত্রসমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে ঘরে ফিরবে তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন। একজন পরাজিতের লাশ কখনো তার মা বাবা গ্রহণ করবে না।

এমন আবু সাঈদ পৃথিবীর বুক আবার আসুক অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে। অন্যায়ের প্রতিবাদী ঝান্ঠা হয়ে, মুখোশদারীর মুখোশ উন্মোচিত করার জন্য ছাত্রসমাজের নেতা হয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মেয়ে পরীক্ষার হলে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু